রোজার সময় সেহেরি খাওয়া অব্দি রাত জেগে লেখা গদ্যগল্প ‘প্রকৃতি এবং পথিকের ভাবনা’। পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
আমরা কী শুনতে পাই?
বিশ্ব সৃষ্টিকূল — আকাশ, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়, পর্বত, সাগর, নদী, জলচর, উভচর, পশু, পাখি, তরু, লতা, বৃক্ষরাজি ইত্যাদি — আপন আপন সুরে গান গাইছে। তারা আশার গান গাইছে। কৃতজ্ঞতার গান গাইছে।
না। আমরা শুনতে পাইনা।
বরং আমরা চোখে সরষে ফুল দেখছি। কারন সকলে এখন ভীষণ বিপদে আছি। পথের দিশা না পেয়ে ক্রমন্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছি। সবকিছু অন্ধকার। ঘোর অন্ধকার। অন্ধকারাচ্ছন্ন আমাদের চারপাশ। বড় একা লাগে এই আঁধারে।
আমরা কী সত্যিই চোখে সরষে ফুল দেখছি?
না। একদমই না।
‘চোখে সরষে ফুল দেখা’ বাগ্ধারাটা আমাদেরকে বড় বিপদে পড়ার মানেটাই শিখিয়েছে। মাঠজুড়ে ফুটে থাকা হলুদ সরষে ফুলের আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখায়নি। সত্যি সত্যি মাঠের সামনে গিয়ে সরষের শোভা দেখলে কার না চোখ জুড়ায়। মাঠে মাঠে যেন হলুদের মেলা বসে।
কিন্তু এখন কী শীতের সময়?
না। গ্রীষ্মে কৃষকের জমিতে সরষের চাষ হয়না।
গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে সোনাঝরা হলুদ রঙের সোনালু ফুল কিশোরীর কানের দুলের মতো বৈশাখী হাওয়ায় দোলে। মহাকবি কালিদাসের অনন্য, অনবদ্য, কালজয়ী সৃষ্টি ‘মেঘদূত’ কাব্যের হলুদবরণ ফুল এখন তো চারপাশ সৌন্দর্যে মাতোয়ারা করে রাখার কথা। গ্রীষ্মের খররৌদ্রে হেঁটে ঘরবন্দী পথিকের বেশ উপভোগ্য সে দৃশ্য দেখার সুযোগ এখন তো আর নেই। সেজন্য অবশ্য তার আফসোসের শেষ নেই।
তেমনি প্রকৃতিতে রীতিমত ঘটছে এমন অনেক কিছুই তো আমরা দেখছি না। সব কিছু এখন বড় ভিন্ন রকম মনে হচ্ছে। গোলাটে লাগছে। জীবনের কোথাও যেন কোন রঙ নেই। পুরো পৃথিবী যেন এক চুপঘুম দিয়েছে।
কিন্তু প্রকৃতি কী ঘুমিয়ে আছে?
না। মনে হয়না।
প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি দিবার ফুরসত কই? আমাদের চোখে অতীতে ছিল সম্পদ, শৌর্য আর বীর্যের স্বপ্ন। এখন আছে শুধু বেঁচে থাকার লড়াই। গোটা মানব জাতির পৃথিবী নামের যুদ্ধক্ষেত্রে করোনা নামক অদৃশ্য এক অনুজীবের সাথে বেঁচে থাকার লড়াই। মাস্ক, পিপিই, সাবান, স্যানিটাইজারের মতো তুচ্ছ প্রতিরক্ষা অস্ত্রই যেন এখন আমাদের ব্রহ্মাস্ত্র। তা নিয়েই গঠনে অতি ক্ষুদ্র এক শত্রুর সাথে দিন রাত লড়াই করে চলছি। বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষদের জীবনে হঠাৎ করেই নেমে এসেছে অন্ধকার। এই অন্ধকারের মাঝেই কাটছে প্রত্যেকের জীবন নিরলস ভাবনায়। আর সেজন্যই আমরা বাগ্ধারার চোখে সরষে ফুল দেখছি।
তাই বলে চন্দ্র সূর্য কী উঠছেনা? আকাশ থেকে কী বৃষ্টি ঝরে পড়ছেনা? বাতাস কী বইছেনা? নদী কী ছুটছেনা? পাখিরা কী গান গাইছেনা? প্রকৃতির সব কিছুই কী ঝিমিয়ে পড়েছে? ঘুমিয়ে পড়েছে?
না। প্রকৃতি কখনো ঝিমায় না। ঘুমায় না।
শুধু প্রকৃতিই নয়, অন্য অনেকেও ঘুমায় না। যেমন, চাপ নিয়ে কেউ ঘুমায় না। বেগ নিয়ে কেউ ঘুমায় না। ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে কেউ ঘুমায় না। অসুখগুলি কখনও ঘুমায় না। সেজন্য অসুস্থ ব্যক্তিও ঘুমায় না। অসহায় কর্মহীন মানুষ জীবিকার চিন্তায় ঘুমায় না।
বিরহ-তাপিত হৃদয় কখনও ঘুমায় না। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে কান্না করে আর ঘুমায় না। সব অপ্রাপ্তি বেদনার কথা মনে করে ঘুমায় না। আপন অস্তিত্ব জিইয়ে রেখে ঘুমায় না। রাতের গভীরতার সমানুপাতিক হারে তারা মনে মনে সত্য বলতে শুরু করে। তাই অনুশোচনায় অনুতপ্ত হয়। আর আজকাল তো মানুষ এমনি এমনি রাত বারোটার আগে ঘুমায় না।
সমগ্র মানবজাতি এখন করোনার বাস্তবতায় হাবুডুবু খাচ্ছে। অভূতপূর্ব জীবন যাপন করছে। আজকাল করোনাভাইরাস নিয়ে গল্প না করে, না শুনে, না পড়ে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ট্রলিং, ভাইরাল ইত্যাদি না দেখে চব্বিশ ঘন্টা হাবাকালা সেজে থাকা কারো পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব মাঝে মাঝেই রাখাল বালকের মতো ‘নেকড়ে বাঘ এলো এলো’ বলে ডাকছে।
করোনা ভাইরাসের ভয়ে সকলেই ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি মানুষের মনে অবিরত ঘুরে বেড়াচ্ছে। করোনা মানুষকে একেবারে অচল করে ফেলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ববাসী এর আগে কখনও এমনটা হতে দেখেনি। এমনকি কল্পনাও করতে পারেনি। সেজন্য হয়তো কেউই এখন ঘুমাতে পারে না। স্বপ্নের ভাঙা-গড়ায় ঘুমাতে পারে না। তন্দ্রাচ্ছন্ন শ্রান্ত আঁখি বীভৎস স্বপ্ন দেখে ঘুমাতে পারে না। করোনার নিষ্ঠুরতায় ক্ষত-বিক্ষত মানব সমাজ এখন আর ঘুমাতে পারে না।
পুরো বিশ্বকে এখন এক ভুতুড়ে নগরীর মতো মনে হচ্ছে। ভিন্নরূপী প্রতিটি জনপদ। ঘরবন্দী মানুষ শুধুমাত্র খাদ্য সংগ্রহের প্রয়োজনে শজারুর মতন গর্ত ছেড়ে বের হচ্ছে। পৃথিবীতে আজ গণজমায়েত বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোন ঘন্টা ধ্বনিত হচ্ছে না।
অথচ নিস্বার্থ প্রকৃতি তার আপন সুরে গান গাইছে। আশার গান গাইছে। ঘরবন্দী পথিক ছোট এক চিলতে বারান্দায় বারেবারে গিয়ে দেখছে ফুলকলি তার পাপড়ি মেলছে। শেষ রাতে শুনছে নীড় ছেড়ে বেরিয়ে পড়া পাখির কলরব। শালিক-দোয়েলের শিস। হারিয়ে যায় তারা ভেরের আলোয়। আবার নীড়ে ফিরে আসে সূর্যাস্তের আয়োজনে।
সন্ধ্যা নামছে। ঘরে ঘরে জলযোগে নাশতা চলছে। এবারে চাঁদ কিরণ চড়াচ্ছে। রিডিং টেবিল সংলগ্ন জানালা দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ পথিককে মাঝে মধ্যে উঁকি মেরে দেখছে। জোৎস্না এসে নীরবে পথিকের মনকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। চাঁদ তারা এসকলি পথিকের একাকী রাতে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। চাঁদকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু পারে না। মনে হয় তার কোনদিনই পাবে না তাকে। কখন জানি আকাশে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যায়। আবার মনে হয় যেন উঁকি মেরে হাসছে কেউ। চাঁদের কোলে বসে। ইশারায় ডাকছে পথিককে। ধরতে ভীষণ ইচ্ছে হয় তার। ধরতে পারে না। মনে হয় পূর্ণিমার আলোয় ফুলেদের সঙ্গে বসে কে যেন ক্ষণে ক্ষণেই হাসছে। জানালার পাশে মাঠের তরু-লতা সকল কেমন জানি একটা আবেশে বিভোর হয়ে আছে। আর হেলে দুলে কারো গায়ে গিয়ে পড়ছে। পথিকের চোখ খুঁজতে গেলেই যেন পালিয়ে যাচ্ছে সে। চাঁদের আলোয় জন্ম নেওয়া বিস্ময়কর মুহূর্তটি রাতের বাতাসে দুরুদুরু কাঁপছে। তাকে আর খুঁজে না পেয়ে পথিকের মনে হয় সবকিছু অসীম ছিল। বিস্তির্ণ সেই মাঠের ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের শব্দ শোনার চেষ্টা করে সে।
শুনতে কী পায়?
না। শুনছেনা সে।
সুভাগ্যবানেরা নাকি শোনে। ইউরোপিয়ানদের মতে তিনি পরম সুভাগ্যবান যিনি ঘরে বসে নিশীথে ঝিঁঝিঁদের ডাক শোনেন। নিশ্চয়ই নদীও জোৎস্নার আলো মেখে দৌঁড়াচ্ছে সাগরপানে। কল কল কলরবে। অবুঝ নিষ্পাপ শিশুরা হাসছে খেলছে। ঘরে বসে প্রকৃতির মতো। এর কারণ তারা গান গায়। কৃতজ্ঞতার গান গায়। আশার গান গায়।
পথিক প্রকৃতির প্রেমে পড়ে। অবাক বিস্ময়ে প্রকৃতির সবকিছু দেখে। শুধু সৃষ্টিতে নয়। তার হৃদয়েও। প্রকৃতির বিস্ময়কর ঘটনা বারে বারে পুনরাবৃত্তি হয় পথিকের মাঝে। সে যেন তাদের কথা শুনতে পায়। সবকিছুই যেন আলোর খেলা। সবুজ প্রান্তর থেকে শুরু করে পাহাড়, জঙ্গল, নদী ও ঝর্ণার স্রোতধারা কিংবা সমুদ্র জলরাশিতে চলছে শুধু আলোর খেলা। আলো সৃষ্টি করছে সব। মেঘেদের সৃষ্টি করেছে আকাশের নিচে এবং সমুদ্রের উপরে । শুভ্র মেঘেদের ভেলা পথিকের মনের আকাশে ভেসে বেড়ায়। সেখানে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা দেখে সে মুগ্ধ হয়। তাদের ভিড়ে চাঁদের আলোয় বারে বারে মিলিয়ে যাওয়া অস্তিত্বকে পথিক খুঁজে ফিরে।
করোনার এ ঘোর বিপদেও প্রকৃতি পথিকের দরিদ্র হৃদয়কে আনন্দে ভরে তোলে। এখন সে প্রকৃতিকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে। প্রকৃতি যখন তার আশে পাশে থাকে তখন সে ভীষণ খুশি থাকে। ছুটে চলে সামনে ভাবনার পাল তুলে। চাঁদের বেগুনি রঙ মাখা আলোর বাঁকা হাসিতে তার হৃদয়ে জোয়ার ভাটা আসে। নীল রঙের দুঃখগুলো আশার ভেলায় ভর করে হারিয়ে যায় আসমানী রঙের হাওয়ায়। সবুজ পৃথিবী যেন আরও সবুজ হয়। হলুদিয়া পাখীর পিউ পিউ গানে, কমলা রঙের পাল তুলে পথিক নৌকা ভাসিয়ে চলে খালের জলের হাওয়ার টানে। পথিক প্রকৃতির কাছে থাকতে চায়। সত্য সম্পর্কে জানতে চায়। একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। রাতের ঝিরিঝিরি মিষ্টি বাতাসের মাঝে সে ভ্রাতৃত্বের নিবিড় ভালোবাসাকে উপলব্ধি করে। জীবনের জন্য অক্সিজেন পায়। তারার নিচে রাতের এবং আকাশের নিচে বৃষ্টির মাঝে নিজেকে খুঁজে পায়।
আকাশে আবার সূর্য জ্বলে ওঠে। বৃষ্টি ঝরে পড়ছে। আকাশ কাঁদছে। কান্না থেমে যায় এক সময়। দুঃখ হতাশার কোনটাই পথিকের মনের আকাশে আর বাসা বাঁধে না। মেঘে ঢাকা সাদা আকাশ নীল হয়। বৃষ্টি শেষে উদিত হয়েছে রংধনু। গাছপালা বাতাসের পিঠে নাচচে আবেগে। এমনি ভাবে পথিকের আবেগ, অনুভূতি, প্রেম, ভালোবাসা কখনো ঘুমায় না। জেগে থাকে সব সময়। পথিকের মনে প্রশ্ন আসে, প্রেমিক কেমন করে নিদ্রা যায়?
প্রকৃতপক্ষে, বড় আবেগী মন পরার্থে নিবেদিত প্রাণ কখনো ঘুমায় না। অপরের দুঃখে সমব্যথী ব্যক্তি কখনো ঘুমায় না। চিরশান্তির অনুসন্ধানকারীরা কখনো ঘুমায় না। লেখকের কলম কখনো ঘুমায় না। যেমন, ধর্মমতে দুকাধের অদৃশ্য লেখকরা ঘুমায় না। ধর্মে মতি আছে এমন প্রাণ কখনো ঘুমায় না। আপন আপন ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে তারা প্রভূর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেন। তাই সৃষ্টিকর্তার অন্বেষণকারীরা ঘুমায় না। তেমনি প্রকৃতিতে সৃষ্টিরা ঘুমায়না। যেমন, চন্দ্র-সূর্য ঘুমায় না। আসমান-জমিন ঘুমায় না। বৃক্ষরাজি ঘুমায় না। জল-স্থল-সমুদ্র ঘুমায় না। পশু-পাখি ঘুমায় না। দিন রাত্রি কখনো ঘুমায় না। রবি, শশী, নদী, নিয়তি, বিততি, অন্তরীক্ষের গল্প আর কিছুই নয় যেন অসীমের গল্প। সবকিছুই পথিকের কাছে বড় অপার্থিব মনে হয়। গুপ্ত, লুক্কায়িত, এবং রহস্যময় মনে হয়। অদৃশ্য, অস্পষ্ট, এবং অলক্ষিত মনে হয়। প্রকৃতিকে সত্যিই অতিপ্রাকৃত মনে হয়।
রাতের অন্ধকারে প্রকৃতিতে চলা রহস্যের গান শোনার আশায় ঘরবন্দী পথিক প্রতি নির্ঘুম রাতে কান পেতে রয় । অথচ অতি ঘুমকাতুরে তখন ঘুমে ঢলে পড়ে এমনকি তৃন শয্যায়। পথিকের মতে, রাতের রহস্য তাই অজানা থাকে ঘুমে বুদ যেবা আছে তার কাছে। আবার কেউবা ছটপট করে রাজকীয় খাটে। তিমির নিশীথের সুখ তাদের ফাঁকি দিয়ে যায়। কেউবা নিশীথের নিস্তব্ধতায় নির্ঘুম রাতের প্রহরে ব্যথিত মনে খোঁজে অসীমকে। সঁপিয়া দেয় নিজেকে প্রেমানুরাগে। প্রশংসাদি উৎসর্গ করে। সমীপে পেশ করে যাচনা। আত্মসমর্পণ করে। আশ্রয় নেয় অসীমে। অন্ধকার রাতে চৌকিদারি করে নেয় অসীম করুনার বন্টন। তেমনি প্রকৃতির এলেম তালিম যত ইতি পথিক পায় নিশীতের তিথিতে।
সৃষ্টিকূলের শ্রেষ্ঠ প্রজাতি হিসাবে মানুষ সমস্যা সমাধানে দক্ষ অভিজ্ঞ। এ কথা জেনে পথিক আশার ভেলায় চড়ে। ভাবতে শুরু করে, করোনার সাথে এই যুদ্ধে আমাদের জয় হবে সুনিশ্চিত। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে অবশ্যই। আর সাথে আত্মশুদ্ধির একান্ত প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই আমরা হব সফলকাম। আমরা হব যুদ্ধে অপরাজেয়।
ঘরবন্দী পথিক মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করে, করোনাভাইরাসের সফল প্রতিষেধক আবিস্কার হবে কোন একদিন। আবার প্রকৃতির নিয়মে অভূতপূর্ব জীবাণুর আবির্ভাব ঘটবে এ ধরায়। তেমনি নতুন নতুন ওষুধে বাজার সয়লাভ হবে। সবকিছু একদিন ঠিক হয়ে যাবে। শিশুরা আবার খেলবে খোলা মাঠে। দৌঁড়াবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। কুস্তাকুস্তি করবে সহপাঠীদের সাথে।
জীবনের সবকিছু স্বীয় গতিতে চলতে থাকবে। সুন্দর ঘন্টাধ্বনি বেজে উঠবে আবার। কল্যাণের জন্য মানুষ আসবে দলে দলে মধুর আহ্বানে। দাঁড়িয়ে থাকবে কাতারে। আলিঙ্গনের ঢেউয়ে ডুব দিবে। সবার হৃদয় আবার আনন্দে নেচে উঠবে। মানুষ হাসবে। আবার কাঁদবে। স্বার্থের পৃথিবীকে আকড়ে ধরবে। জীবনে ফিরে আসবে সব পার্থিব সুখ। সব রঙ। পুতুল-নৃত্য’র মোহ। দুনিয়ার জাদু।
পথিক এবারে অবশ্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেই জাদুর ভেল্কিতে সে ভুলে যাবে না যে, প্রকৃতি পরিবেষ্টনকারী একজন আছেন যে তাকে দেখছেন। অনেক ভালবাসার দৃষ্টিতে। প্রকৃতির কোলে বসে উঁকি মেরে হাসছেন তাকে দেখে। সে যা বলছে শুনছেন। সে যা ভাবছে বুঝছেন তার হৃদয়ের আসনে বসে।
তাই পথিক প্রতিজ্ঞা করে, আর নয় পাপেট্রি। পঞ্চালিকা। আর নয় পুতুল-নৃত্য’র মোহ। মিথ্যা কথার বেসাতি। আর নয় বেহুদা কথার আলাপন। এবারে জীবন শুরু করি। নতুন জীবন। এক বিশুদ্ধ জীবন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বোধ হীন এক অনন্য জীবন। সে আত্মপ্রত্যয়ে বলে উঠে, হতাশার গান ছাড়ি। গলা ছেড়ে অসীমের কৃতজ্ঞতার গান গাই। নিরাশা ছাড়ি। আশার গান গাই। মানবিক স্বরে অসীমের করুনা প্রাপ্তির আশায় গান গাই।
ফরিদ আহমদ। ১৪ মে, ২০২০