স্কুলজীবনে রোজ ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠতাম। ফজরের ওয়াক্ত শেষে জগিং এর নামে এক ঘন্টা দৌড়াতাম। বাসায় ফিরে গোসল করে মায়ের হাতে গরম গরম ভাত খেয়ে স্কুলে যেতাম। দুই টাকার চটপটি আর এক টাকার আইস খেয়ে টিফিন পিরিয়ডের বাকীটা সময় পারি আর না পারি ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতাম। বিকেলে স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরে স্কুলব্যাগটা রেখেই ছুটতাম আমাদের বাড়ির সামনের সবুজ রঙের ঘাসে ঢাকা বড় মাঠ পানে। খেলাধূলা, ছুটাছিুটি আর হইচই ছিলো আনলিমিটেড। মাগরিবের নামায শেষে সন্ধ্যা রাতে দুই এক ঘন্টা পড়াশোনা । তারপর সাড়ে আটটায় নৈশভোজ শেষে দিতাম বেশ এক ঘুম। এতো কিছুর পরও স্বাস্থ্যটা কখনো আমার সুখের সম্পদ হয়ে উঠেনি ।
স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বুয়েটে ক্লাস শুরুর আগে আমার এক অধ্যাপক তালতো ভাই আমাকে বেগুনি রঙের ডায়ালের একটা ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন। বেগুনী রঙের জন্যই ঘড়িটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল । ছেলেবেলায় ঘরের দেয়াল ঘড়ি, স্কুল জীবনে কেসিওর কালো বেল্টের ডিজিটাল ঘড়ি আর বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে যৌতুকের কানাঘুষায় সাদা রঙের সিকো ফাইভ ঘড়ির সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সোনালী কাবিনের বিয়ের — ‘সোনার দিনার নেই, দেনেমাহর চেয়ো না হরিণী/ যদি নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু’টি’র একটিতে সোনালী ঘড়ি স্থান করে নিতে দেখেছি।
বেগুনি বর্ণের সবজি ও ফল খেয়েছি। ছেলেদের ঘড়ি যে বেগুনী রঙের হতে পারে তা কখনও আমার ধারনায় ছিল না। আসলেই সময়ে সময়ে নানা বর্ণের রঙ রাঙিয়ে দিয়ে যায় আমাদের মন আর প্রকৃতিকে। রঙের খেলা যেন এক মায়ার কাজল। শুনেছি মানুষ সহ অনেক প্রাণীর প্রাণ আর বেঁচে থাকার যোগান নাকি নির্ভর করে রঙের খেলার উপর। কেউ বা যা নয় তা সেজে আছে আবার কেউবা প্রকৃতির বুকে এমন ভাবে লুকিয়ে আছে যাকে সনাক্ত করা বা চেনা এতো সহজ কাজ নয়। বর্ণ পরিবর্তন বা নকল করা সব কিছুতেই যেন ছলচাতুরী। সবটাই জগতে টিকে থাকার জন্য। সবটাই জীবন সংগ্রামের জন্য।
রঙ্গীন ফুল, রঙ বেরঙের হরেক রকম পাখি, প্রাণী ,সুন্দর প্রজাপতি সবাই নিজেদের লাভের জন্যই রঙের বাহার দেখায়। যেমন কিনা লাল কাঠবিড়ালের দেহের উপরের লোমগুলি লালচে বাদামী হয় যার দরুন সে যখন মাটিতে নামে তখন তাকে হঠাৎ করে চেনা যায় না। আবার তার বুকের দিকের লোমগুলা সাদা হয়, তাই যখন সে গাছের উপর থাকে তখন নিচ থেকে তাকে চিনতে পারা কষ্টকর হয় কারণ তখন তার পেছন দিকে থাকে সাদা মেঘে ঢাকা নীল আকাশের শুভ্র আভা। কী দুষ্টু কবি কাজী নজরুলের কাঠবিড়ালী — কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?/…খাও একা পাও যেথায় যেটুক!/… কাঠবেড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি’ হবে? বৌদি হবে? হুঁ /রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঃ!/ তুমি ন্যাংটা পুঁটো?/ফ্রকটা নেবে? জামা দুটো?/আর খেয়ো না পেয়ারা তবে/বাতাবি নেবুও ছাড়তে হবে!/দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ যে ছুট? অ-মা দেখে যাও!..। সত্যিই রঙীন কাঠবিড়ালী রঙের চমক দেখিয়ে গাছেরটাও খায় আবার মাটিরটাও কুড়োয়। এভাবে অনেকেই অন্য কারোর বা বস্তুর মতো রঙ ধরে। অর্থাৎ একজন আরেক জনকে নকল করে। এভাবেই সবকিছু খায়।
সূর্য থেকে যে আলোক রশ্মি পৃথিবীতে আসে তার রঙ মূলত সাদা। নিউটন তার বিখ্যাত প্রিজম পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান করে দেখিয়েছেন যে সূর্যের আলোও আসলে সাত রঙের সমষ্টি। এই সাদা রঙের ভেতরে বেগুনী, নীল, আসমানি, সবুজ হলুদ, কমলা ও লাল এই সাতটি রঙ লুকিয়ে থাকে। “বাবার ( বাবর) হইল ( হুমায়ুন) একবার (আকবর) জ্বর (জাহাঙ্গির) সারিল (শাহ জাহান) ঔষধে (আওরঙ্গজেব)” — মুঘল সম্রাটদের নাম ক্রনোলজিক্যালি মনে রাখার উপায়ের মতোই, কোন রঙের নাম যাতে আমাদের মন থেকে মুছে না যায় বা বাদ না পড়ে স্কুলের পাঠ্য বইয়ে বাংলায় সাতটি রঙকে সংক্ষেপে ‘বেনীঅসহকলা’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রংধনুর সাত রং এর প্রথম রং বেগুনি। হয়তো সেজন্যই তালতো ভাইয়ের দেয়া উপঢৌকনটা এতো বেশী পছন্দ হয়েছিল।
গুগলে ব্রাউজিং করে জানতে পেরেছি, কেউবা পর্যটন করে দেখেছেন চীনের ঝাংগিয়ে দাংজিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওগ্রাফিক্যাল পার্কের রংধনুর সাত রঙ — বেগুনি-নীল-আসমানি-সবুজ-হলুদ-কমলা-লালে — রঙীন বেলেপাথরের তৈরি পাহাড়। বৃষ্টি স্নাত আকাশের রঙধনু নয় বা রাসেল ক্রো অভিনীত ‘নুহ’ ছবির ঝড় শেষে আবির্ভূত রঙধনু নয়, পাহাড়ের গায়ের এই রংমহল কেউ যেন দানবীয় তুলিতে একেঁ রেখেছে পাহাড়ের গায়েই। মনে হয় যেন আকাশের সাত রঙ নেমে এসেছে পাহাড়ে।
পৌরাণিক কাহিনীর কোন এক দ্বীপের লোক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঝামেলা কোলাহল আর হৈচৈ কমানোর জন্য দ্বীপের মানুষদেরকে দ্বীপ থেকে দূরে সরিয়ে ভূমিতে নেওয়ার নিমিত্তে দ্বীপদেবতা রঙধনুর পুল তৈরি করে দিলেন। রঙধনুর সেতুর উপর দিয়ে হৈচৈ প্রিয় মানুষরা যখন পার হচ্ছিল, তাদের মাঝে কেউ কেউ ভারসাম্য রাখতে না পেরে অকূল সাগরে পড়ে যায়। তারা আর মানুষ থাকতে পারেনি। অবৈজ্ঞানিক গল্পে,ব্যাখ্যায় রঙধনু হচ্ছে মর্ত্য ও স্বর্গের মাঝে একটি সংযোগ পথ। প্রয়োজনে পুণ্যাত্নারা রঙধনু দিয়ে হেঁটে হেঁটে আকাশলোক থেকে মর্ত্যলোকে নেমে আসতেন। আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা সহ অনেক অঞ্চলে রঙধনুকে মনে করা হতো একটি বিশাল ড্রাগন। এই ড্রাগনটি পিপাসা মেটানোর জন্য বৃষ্টির সময় উপরে ওঠে আসতো। এবং একেই সাত রঙে রঙিন রঙধনু হিসেবে দেখা যেতো। সত্যিই মজার যতো সব গল্প।
বুয়েটে পড়তে এসে জগিং টগিং ছেড়ে ক্লাস-ক্লাসটেস্ট, সেশনাল-কুইজ আর এসাইনমেন্টের পিছন পিছন দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে রাতের বেলায় আগের মতোই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তাম। সিনিয়র রুমমেটদের ঠেলা ধাক্কায় রাতের ঘুমটাও একদিন সত্যি সত্যি উড়ে গেলো দূর আকাশে। সিনিয়ররা প্রায়ই বলতো — নিয়ম মেনে চললে এতো কঠিন পড়াশোনা করতে আসার কি দরকার ছিল। আইন শৃংখলা বা প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দিলেই তো পারতে। দেহযন্ত্রটাও ভালো থাকতো।
পাথরের পৃথিবীতে কাঁচের হৃদয় প্রিজম সদৃশ দুনিয়ায় বন্দী হয়ে সাদামাটা জীবন বিভিন্ন বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়ে গেলো একদিন। বেগুনী রঙের সেই ঘড়িটাও অসাবধানতায় অবহেলায় ভেঙ্গে গেলো কোন এক ক্লান্ত বিকেলে পিঠের নীচে চাপা পড়ে । নিয়ম-শৃঙ্খলার বন্ধনের বাঁধন ছিন্ন হলো। চুটিয়ে ঘুমানোর অভ্যাসকে দিলাম ছুটি। রাত জাগা পেঁচা এসে ভর করলো মনের আকাশে। পৃথিবী এখন বদলে গেছে সব কিছু রঙীন লাগে।
চাঁদের বেগুনি রঙ মাখা আলোর বাঁকা হাসিতে হৃদয়ে জোয়ার ভাটা এলো, নীল রঙের দুঃখগুলো আশার ভেলায় ভর করে হারিয়ে গেলো আসমানী রঙের হাওয়ায়। সবুজ পৃথিবী যেন আরও সবুজ হলো। হলুদিয়া পাখীর পিউ পিউ গানে, কমলা রঙের পাল তুলে নৌকা ভেসে চললো খালের জলের হাওয়ার টানে। প্রকৃতির কোলের অর্ধ-বসনা রমনীর খোপাঁর লাল রঙের রক্ত জবা মনকে হার মানাতে চাইলো । অনেক পরিচিত-পরিচিতাকে দেখেছি রংধনুর সাত রঙের পরশে রাঙিয়ে দিতে প্রিয়তমাকে এমনটি বলে, “ভালবাসার নীল পদ্মে জড়িয়ে তোমায় রাখবো, লাল রঙের রেশমী চুড়িতে নয়তো সিঁথির সিঁদুর লালে। লাল মোরগের পাখার মত ওড়ে তোমার শাড়ী।”
কেউবা আবার কাউকে রাঙা ঠোঁটের লাল বাঁধনে রাখলো ধরে এই বলে “তুমি সাগরের অথৈ নীল জলে আমার স্বপ্নে কাতোর। আসমানিতে ছড়িয়ে তুমি আমার যতো নীল, হলুদে তুমি নব-বধূর স্নান আর সরষে ফুল, হাওয়ায় হাওয়ায় খেলে দোল, হিম হিম পরশে। প্রিয় যদি কাছে এসে বসো, কর্ণে তোমার পড়িয়ে দিবো, প্রকৃতির দুল, শীতের সিমের বেগুনী ফুল। কমলায় তুমি গোধূলীর হাসি- কবিতার ছন্দে তুমি আমার কল্পনার অন্তমিল।” যেমন কিনা জোনাকি পোকা সবুজ নীলাভ আলো দিয়ে তার সঙ্গীকে সংকেত পাঠায়। আলোকে কাজে লাগিয়ে প্রাণীরা বিভিন্ন বর্ণ তৈরি করে এবং তার সঙ্গী, দল বা অন্য প্রজাতির প্রাণীদের সংকেত পাঠায়। সেই সাথে প্রকৃতি থেকে প্রয়োজনীয় রসদকে কাজে লাগিয়ে সে পৃথিবীতে যোগ্যতম হিসেবে বেঁচে থাকে এবং প্রকৃতিকে করে তুলে বর্ণীল এবং মায়াময়।
সবুজ প্রান্তর থেকে শুরু করে পাহাড়, জঙ্গল, নদী ও ঝর্ণার স্রোতধারা কিংবা সমুদ্র জলরাশিতে চলছে শুধু রঙের খেলা। প্রকৃতিতে যেন শুধুই রঙের উৎসব। দেবখাদ্য সাদা দুধ, ছানা আর চিনির রসায়নে রঙধনুর সাত রঙের কোনটি মিশে তৈরী রঙ-বেরঙের সুন্দর, সুস্বাদু রঙিন বাহারি আকর্ষণীয় মিষ্টি মানুষের ছোয়ায় আধুনিক শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। রঙ বা বর্ণহীন পৃথিবী যেন কল্পনাই করা যায়না।
নানান জৈবিক প্রক্রিয়ায়ও রঙ যেন জীয়ন কাঠি। কী অদ্ভুত ব্যাপার। আমরা লাল-হলুদ যে ফুলকে দেখি লাল আর হলুদ রঙের, ঠিক সেই ফুলকে মৌমাছি নাকি দেখে অতিবেগুনী, নীল এবং সবুজ রঙের। সত্যিটা হচ্ছে এরকম যে, আমরা যা কিছু যে রঙের দেখি অন্য প্রাণীরা তা সে রঙের নাও দেখতে পারে। ময়না পাখিকে আমরা কালো দেখলেও তার সঙ্গী পাখি তাকে নাকি নীল-সবুজ-লাল-হলুদের সংমিশ্রন হিসাবে দেখে। তাই জন্য হয়তো অন্যের কাছে তাদেরকে সাদা-কালো-অসুন্দর মনে হলেও, প্রিয়া বা প্রিয়র কাছে তার প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে সবসময় রঙীনই মনে হয়।
ছেলেবেলা থেকে জেনে আসছি ,ষাঁড় নাকি লাল রঙ দেখে খেপে যায় এবং গুতো দিতে আসে। স্পেনের বিখ্যাত মেটাডোরদের ষাঁড়দের নিয়ে খেলায় লাল রঙের কাপড় ব্যবহার করতে দেখেছি। এখন শুনছি তা আদতে ঠিক না। অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতই ষাঁড় নাকি লাল রঙ দেখতে পায় না। তাদের সামনে যে কোন রঙের কাপড় নাড়লেই নাকি তারা শিং বাগিয়ে গুঁতো দিতে আসবে। কাপড় নাড়ানোটাই আসল।
সব প্রাণীই যে চোখ দিয়ে বর্ণ চেনে তাও নাকি ঠিক নয়। কত রকম ব্যাপার স্যাপার। এতোদিন জানতাম, বেচারা বিষাক্ত সাপদের নাকি দৃষ্টি শক্তি খুব দুর্বল। তারা নাকি কানে শুনে চলে অন্ধদের মতো। আর সাপের পা দেখলে নাকি রাজা হওয়া যায়। অনেকেই বলে, ‘সাপের পাঁচ পা দেখেছিস?’ মানে শুনছি, কাউকে তোয়াক্কা না করা নিজেকে বেশি বড়ো মনে করা। আবার কেউবা কাউকে শাসাচ্ছে এই বলে, ‘সাপের লেজ দিয়ে কান চুলকাচ্ছ।’ জেনে বেশ অবাক হয়েছি যে সাপের চোখের সামনে নাকি তাপ-সংবেদনশীল ইন্দ্রিয় থাকে যা দিয়ে শিকারের অস্তিত্ব টের পায়। তার কাছে নাকি দিব্যদৃষ্টির ক্ষমতা না থাকলেও প্রকৃতিগত ‘তাপ-দৃষ্টি আছে। যেমনটি আজকাল শুনছি হোমোসেপিয়ানদের লোলুপ দৃষ্টির কথা।
অনেক প্রাণীর গায়ের রঙ তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এর ফলে, তার শিকার বা শিকারী তাকে চিনতে পারে না। অতীতে যুদ্বক্ষেত্রে সৈনিকের পোশাক থেকে শুরু করে অস্ত্রশস্ত্র সব কিছুই ব্যাকগ্রাউন্ড এর সাথে একদম মিশিয়ে রঙ করিয়ে নেওয়া হতো। প্রাণীদের সৃষ্টিগত এই কৌশল মানুষও আজকাল বেশ কাজে লাগাচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য কিংবা স্বার্থ হাসিলের জন্য মানুষও রঙ বদলায়, অথচ মরে গেলে আমরা হোমোসেপিয়ানরাই অমর হতে চাই।
যাক সেসব কথা। রঙের দুনিয়ায় ওমান প্রবাসী এক ভাগ্নে গত বছর নিয়ে এসেছে সাদা রঙের এক হাত ঘড়ি। বায়না ধরেছে ঘড়িটি পরতে হবে মামার। সেই যে বেগুনী ঘড়ি ভেঙ্গে গেছে আর ঘড়ি হাতে পরি নাই। বায়োলজিক্যাল ঘড়িটা ইতিমধ্যে ঘোড়া হয়ে গেছে । এলোমেলো চুটছে আর ছুটছে। তার লাগাম ধরার জন্য এবারে সাদা ঘড়িটা হাতে দিলাম। সাদা রঙের সংস্পর্শে সত্যিই মন অন্যরকম ভালো লাগায় ভরে উঠেছে।
সাদা বলতে বোঝায় সকল রঙের সমষ্টি আর কালো হচ্ছে সকল রঙের অনুপস্থিতি। সময়ের পরিক্রমায় চুল দাড়ি সাদা হয়ে গেছে। সাদা চুল দাড়িতে — সব রঙের আলোর অতি কম প্রফিলনে সৃষ্ট কুচকুচে কালো রঙের কলপ লাগিয়ে মুখ রঙ্গীন করে লাইফ লং চার্জড সিএমওএস ব্যাটারি যুক্ত দেহ ঘড়ির ছুটে চলাটা আমরা কেউই যে থামাতে পারবোনা। তাই সাদা চুলের সাথে ঘড়িটাও সাদা হলে মন্দ হয়না। আর কিছু হউক না হউক ভাগ্নেটাতো অন্ত:ত খুশী হবে। সব রঙ মিশিয়ে না হয় আবার নিষ্কলঙ্ক সাদা রঙই বানালাম।
সকল রঙের ভিড়ে, রঙের দুনিয়ায় কালো রঙের অশান্ত অক্লান্ত যৌবনের জয়গানের মাঝে, আমার সাধারন জীবনের ছন্দহীন গল্পের মাঝে, সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো না হয় আবার জাগিয়ে তুলি । সাদা শুধু বয়স্কদের জন্য নির্ধারিত রঙ নয়। পেঁজা তুলোর মতো ভেসে চলা শরতের মেঘমালা, ঘন কাশবন, দেশি দোলনচাঁপা কিংবা ভিনদেশি লিলি, শান্তির প্রতীক পায়রা বা তুলতুলে নরম বিড়ালছানা এ সবই সাদা । আমাদের হৃদয়ের খুব কাছের রঙ সাদা । সাদা রঙে হৃদয়ের শুভ্রতা আর পবিত্রতার অনুভূতিকে তীক্ষ্ণ করে জাগিয়ে তুলি সজীবতার পরশে আবার। সাদা একটু বেশিই ভালো। তাই সাদায় সাদায় আলোকিত হউক সকলের বিরামহীন ভাবে বয়ে চলা ক্ষনকালীন জীবনের সাঁকো।
ফরিদ আহমদ