বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আত্মা, সৃষ্টি রহস্য, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, দর্শন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটের সমন্বয়ে চিত্রিত ফিলসফিক্যাল সেমি নন-ফিকশন “শরীর শক্তি সুষমতা সমীকরণ”। যারা নিজেদের ভেতরের সত্ত্বাটাকে চিনতে শেখেন, তারা খুঁজে পান অসীম শক্তির এক আধার। এ গল্পের ফিলসফিক্যাল ম্যাটারগুলো কারো ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে নাড়া দেয়ার জন্য নয়, কারো মনে চিন্তার উদ্রেক ঘটাতে নয়। ভিন্নতার স্বাদ পেতে লেখাটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো সবাইকে। হ্যাপি রিডিং!
শরীর শক্তি সুষমতা সমীকরণ
Inputs are passed on by the sensory organs to the epiphysis in the brain and from there to the immaterial spirit — গণিতবিদ রেনে ডেকার্টস অশরীরী আত্মা সংশ্লিষ্টে এরকম একটা উক্তি করেছিলেন। আত্ম শব্দের অর্থ ‘আমার’ যখন তা ব্যক্তিগত অধিকার বা মালিকানার উপর জোর দেবার জন্য ব্যবহৃত হয়। ‘আমার আমার কে-কয় কারে ভাবতে গেল চিরকাল, আমি আদি, আমি অন্ত–আমার নামটি রুহুজ্জামান।’ — কি চমৎকার বাউলের ভাবনা। আমার বাড়ি। আমার গাড়ি। আমার জমি। এখান থেকে যেটুকু জমিন দেখছেন সব আমার। অতি বস্তুবাদী ভাবনা।
চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছা এই মানসিক কাজগুলি থেকে স্বতন্ত্র দেহাতিরিক্ত একটা স্থান হচ্ছে মন। নিরবয়ব সত্তা বা আত্মাকে বুঝায়। আত্মা শব্দের অভিধানিক অর্থ ‘আমি’। অনেকের মতে আত্না একটা চেতনা যা অচেতন অবস্থায়ও সজাগ থাকে।
দর্শনশাস্ত্র মতে মানুষের মন হচ্ছে তার বুদ্ধি এবং বিবেকবোধের এক সমষ্টিগত রূপ। আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা, ইচ্ছা, এবং কল্পনার মাধ্যমে মন আলোড়িত হয়। মনের প্রবৃত্তির কোন কিছুই শরীর থেকে আলাদা নয়। মস্তিষ্কের নির্দেশনায় পরিচালিত পুষ্টি, শ্বসন, ক্ষরণ, রেচন, জনন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলীর মাধ্যমে মন গড়ে উঠে। সহজ কথায়, মন হলো এমন কিছু যা নিজের অবস্থা এবং ক্রিয়াগুলি সম্পর্কে সচেতন।
স্বাস্থ্যগত সকল পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো এসেছে। অথচ শারীরিক কষ্ট হচ্ছে। দেহের নানা স্থানে ব্যথা-বেদনা অনুভব হচ্ছে । অক্ষির সম্মুখে কোন কিছু একটা অনুপস্থিত। কিন্তু অনেকে তা প্রত্যক্ষ করছেন। আশেপাশে কেউ নেই । অথচ ফিসফিসানি শুনছেন। অদ্ভুত অদ্ভুতুড়ে অনুভব। মনে অনেক দুঃখ-কষ্ট-যাতনা। শরীরের উপর রীতিমতো মনের প্রভুত্ব চলছে । অথচ যে মনের এত প্রভাব প্রতিপত্তি সে কিনা সংজ্ঞা মতে দেহাতিরিক্ত একটা স্থান ।
মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ডের অনেক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা পরিচালিত হয়। অতি বস্তুবাদী, বাস্তববাদী, সাধারন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ মনে করে ঠোঁট সঞ্চালনে, হেঁটে হেঁটে, সাইকেলে প্যাডেল মেরে, বাইক দিয়ে, গাড়ি চড়ে, উড়োজাহাজে উড়ে, ফেসবুক চালিয়ে বা চিঠি পত্রের মাধ্যমে তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, যোগাযোগ মস্তিষ্কের মধ্যে একটি মিথস্ক্রিয়া। সাধারণত মিথস্ক্রিয়া বলতে দু’টি ভিন্ন বস্তুর মাঝে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া কিংবা বিনিময়কে বুঝায়।
পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় দুটি বস্তুর মধ্যে একটি কোনো কিছু যেমন- ইলেকট্রন ত্যাগ করলে এবং অপর কোনো বস্তু তা গ্রহণ করলে তাদের মাঝে মিথস্ক্রিয়া ঘটছে বলা যায়। আর জায়া-পতি, কপোত-কপোতি, প্রেমিক-প্রেমিকা অর্থাৎ ভালোবাসার মানুষেরা মৃত্যু অবধি নিজেদের মধ্যকার রসায়নই বুঝে উঠতে পারে না। তাইতো এত বিচ্ছেদ-বিরহ-রাগ-অনুরাগ।
সময়ে সময়ে কতক ব্যক্তি কতিপয় ভবিতব্য অগ্রে অনুভব করতে পারে। তাদের সূক্ষ্ম বিচারশক্তি এবং মস্তিষ্কের মিথস্ক্রিয়ায় তৈরী তরঙ্গ অগ্রিম ভাবে কোন অবশ্যঘটনীয় বিষয় উপলব্ধি করতে তাদেরকে সাহায্য করে । তদনুসারে কর্ম পরিকল্পনা তাদের ভিতর থেকে আসে। সে সমস্ত মানুষ উদ্বেগ-উৎকন্ঠার উর্ধে উঠে। তাই তাদের মস্তিষ্কের বাধাহীন তরঙ্গ বেশি মাত্রায় উর্ধস্তরে সম্প্রচারিত হয়। মস্তিষ্ক প্রেরিত এই ফ্রিকোয়েন্সিগুলি দেহাতিরিক্ত একটা স্থানে গৃহীত হয় এবং তার জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করে।
ডেকার্টসের বিশ্বাসকে বাংলায় অনুবাদ করলে এরকম কিছু একটা হয় — ‘বহির্জগতের প্রভাবে সৃষ্ট অনুভূতি ইনপুট হিসেবে দেহের বিভিন্ন অংশে থাকা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে। এবং তা থেকে সৃষ্ট সংকেত অশরীরী সত্তা তথা আত্মার কাছে পৌঁছে।’
মানুষ মন দিয়েই অনুপস্থিত কাউকে উপলব্ধি করতে পারে। মনোজগতে সৃষ্ট চিন্তা-চেতনা-ধ্যান-ধারণা, সুখ-দুঃখ-অনুভতি শরীরের আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো যখন পূরণ হয়ে যায়, মানুষ তখন নানারকম মানবিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যাবলী সম্পাদনে উদ্যোগী হয়। সাংস্কৃতিক চর্চা, বৈজ্ঞানিক চর্চা, দার্শনিক চর্চা, সাহিত্য চর্চা, গল্প, আরাম, আয়েশ করে। এ সব কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে প্রেম-প্রীতি, স্নেহ, ভালোবাসা, মমতা, প্রশান্তি, প্রভৃতি ধনাত্মক বিষয়গুলো বিকশিত হয়। এবং ক্রোধ, হিংসা, লোভ, লালসা প্রভৃতি ঋণাত্মক বিষয়গুলো থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারে ।
‘Everything in the Universe is made of Math – Including you’ এমআইটির মহাবিশ্ব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিজ্ঞানী ম্যাক্স ট্যাগমার্কের উক্তিটি দিয়ে তিনি প্রস্তাব করছেন যে, আমাদের বাস্তব অস্তিত্ব মাত্র গণিত দ্বারা বর্ণিত নয়, এটি গণিত। কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং এর মতে অমানবিক মানসিকতার সম্ভাবনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত হয়। সাইবারনেটিক এই বুদ্ধিমত্তা তথ্য তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে কাজ করে। তাঁর মতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ কোনো যন্ত্রকে যদি অ্যালগরিদমের আওতাধীন করা হয়, তাহলে সেটার পক্ষে সকল গাণিতিক সমস্যার নির্ভুল সমাধান সম্ভব।
অতি সহজ ভাষায় অ্যালগরিদমকে বলতে পারি গাণিতিক বা অন্যান্য সমস্যা-সমাধানের জন্য নির্দেশাবলী বা নিয়মাবলী যা অনুসরন করলে গণনা বা অন্য যে কোন সমস্যার সমাধান অতি সহজে খুজেঁ পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষ তার অনাগ্রহ-অবহেলা-অলসতার জন্য অ্যালগরিদমের তথ্য—তত্ত্বের প্রক্রিয়াগুলি সমন্বয় করতে পারেনা। ফলে সে ভুল করে।
প্রথম মোঘল সম্রাট ছিলেন বাবর। ষোল শতকের শুরুতে তিনি মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা করেন। তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের চল্লিশ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে। ব্রিটিশ সরকার পরিচালিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঊনিশ শতকের মধ্য ভাগে মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহকে সিংহাসনচ্যুত করে এবং রেঙ্গুনে নির্বাসিত করে। সেই সাথে বিলুপ্ত হয় মুঘল সাম্রাজ্যের। নির্বাসনে থাকা অবস্থায় তিনি অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করেন। এই হচ্ছে ‘আমার’ সাম্রাজের অবস্থা। নিশ্চয়ই কোথাও কোনো নিয়মাবলী-নির্দেশাবলী অনুসরনে বা গণনায় কোন সমস্যা ছিল।
জনৈক বন্ধুর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহনের নিমিত্তে বিদেশ গমন উপলক্ষে আয়োজিত আসরে গিয়েছিলাম। মধ্যাহ্ন ভোজন শেষে দেখেছি নেশার ঘোরে মত্ত একজন বলেই চলছিল একই কথা — আমি কিন্তু নেই। — আমি কিন্তু নেই। কথাটির সাথে সুর মিলিয়ে বন্ধুটি উপযুক্ত ভঙ্গি দান করছিল। অবলোকনে হাসি উঠছিল বারেবারে।
যদি আত্মা অর্থ ‘আমি’ হয়, ‘আমি’র পরিবর্তে আত্মাকে প্রতিস্থাপন করি তাহলে কথাটির মানে দাঁড়াচ্ছে — আত্না কিন্তু নেই। যদি আত্না মানে চেতনা বুঝায় মনে হচ্ছে সে উপলব্ধি করেই বলছিল — চেতনা কিন্তু নেই। অর্থাৎ ‘আমার’ কোন চেতনা নেই। বাস্তবে সত্য কী মিথ্যা? তবে একথা অনেক শুনেছি যে, মানুষ নাকি সুরাপানে সত্য কথা বলে। ধরে নেই, বন্ধুটি তখন কৃত্রিম আচরণ করছিল না। তাহলে সুরাপান করে সে সত্যিই বলছিল। তার চেতনা সে হারিয়ে ফেলেছে। এবং এটা মাত্রারিক্ত পেগ পানে হয়েছিল। ধরা যাক, একটা ভুল কাজের সংঘটন হয়েছে। অতএব, এরকম একটা ব্যাখা দাঁড় করান যায় যে, ভুল কাজ করে, অপরাধ করে, নির্দিষ্ট নির্দেশাবলী-নিয়মাবলী তথা অ্যালগরিদম অমান্য করে মানুষ চেতনা হারিয়ে ফেলছে। আত্নার সঙ্গে সংযোগ সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
এরকম কথা প্রায়ই শুনি — তার একদম আত্না নেই। সে কাউকে কোন প্রকার আর্থিক-মানসিক সাহায্য-সহযোগিতা করে না। এ দিয়ে বক্তা উক্ত ব্যক্তির মনের ব্যাপারে কটূ কথা বলতে চেয়েছেন। ধরে নেই — আমার আত্না নেই। আত্না অর্থ ‘আমি’ হলে তাহলে দাঁড়াচ্ছে আমার ‘আমি’ নেই। শুধু শরীরটা আছে। শক্তিহীন শব। ‘আমি’র আগমন-প্রস্থানের মধ্যস্থলে অস্তিমান পটভূমির প্রত্যক্ষ রূপ জুড়ে দিয়ে কল্পমূর্তিটির শরীর শক্তি সুষমতা সমীকরণের প্রতিপাদন করি ।
শক্তির অবিনশ্বরতা — ‘শক্তির কোনো ক্ষয় নেই। কেবল অবস্থানের রূপান্তর আছে মাত্র।’ — মেনে অমর ‘আমি’র অগমন। এ মর ধরায় মায়ের ভিতর রুপ লাভ। সূতিকাগারে বস্তুজগৎ এর সাথে পরিচয়। হাটি হাটি পা পা করে পৃথিবীতে পথ চলা। মূল চালিকাশক্তি ‘আমি’ তার নিত্য সঙ্গী ।
মাটির ওপরে নদীর তীরে সভ্যতা। সুসভ্য জনমানুষের বসতি। আছে ভূমিকম্প, খরা, বন্যা-প্লাবন আর নদীভাঙন। বর্ণের বড়াই। শ্রেনীর লড়াই। পুতুল-নৃত্য’র মোহ। ভেলকির খেলা। ডাগর চোখের মায়া জাল। প্রণয় প্রহেলিকায় স্বপ্ন বুনন। বন্দী হয় পরস্পর পলকে।
মাটির ওপরে ওরা স্বচ্ছন্দ। গগনে আজ শত কামানের গুমগুম আওয়াজ। বন্ধ বাতায়নের বুক চিরে কোনও রকমে ওপরে দেখে ঈশান কোণে। নতুন করে বুঝি মেঘ জমেছে আকাশে। পবনে প্লাবনের সংকেত। তাকিয়ে কী দেখছ?
অতপর হস্ত প্রশস্ত হয় উপরে। মনের সমস্ত দ্বিধা কাটিয়ে ঘাড় কাত করে সে সম্মতি জানায়। আশ্লেষে উল্লাসে ভাসে তারা। চুপে চুপে জলে ডুব দেয় পানকৌড়ি। একের পর এক আপন পথ করিয়া লওয়া। ঠোকাঠুকি। ঠুং ঠুং। গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। এক পশলা বৃষ্টি।
থ্রি ডব্লিউর পেল্লয় প্রেরণায় শুরু হয় ইঁদুর দৌড়। অতি অনভিজ্ঞ জন-সাধারণ সমর্থগণ তো এমনিতেই মৌলিক চাহিদা পূরণে সারাদিন দৌড়ের উপরই থাকে। এভাবে মেতে ওঠে তারা অন্তহীন পৈশাচিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। স্বার্থের পৃথিবীকে আসুরিক শক্তিতে আকড়ে ধরে। যেন সুগোল শৈল শক্ত গুয়ার সাথে খোসার মতন বন্ধন। তাই তো প্রস্থানে এত যন্ত্রণা। নির্গমনে লাল লংকার ঝাল।
ফের সৌদামিনীর ঝলকানি। এই যাত্রায় বিনা মেঘে মেঝেতে বজ্রপাত। নিদারুণ ভয়ে শরীর কেবল হিম হতে হতে জমে যায়। ফণীর ভয় নয়। কেউ কাটা নয়। ভূত-প্রেতিনী নয়। বন্যা-প্লাবন নয়। এসেছে অলখা আচমকা।
জীবন এখন অতি প্রিয়। ‘আগে আমি বাঁচি। আগে আমি বাঁচি।’— স্লোগানে উত্তাল বেলাভূমি। শ্লোক আওড়ায় তারা।— ‘পুতের গেছে বউ, ঝির গেছে জামাই। যাকগা পরে পরে আমারে যেন না ধরে।’ সাধের খেলা সাঙ্গ হয়। পড়ন্ত বেলায় ছোঁয়া ছোঁয়ির খেলায় মত্ত অলখা। সভ্যতা মৃত্তিকার তলায় এসে ঠেকে। দর্প চূর্ণ হয় লব্ধ জ্ঞান গরিমার। মুমূর্ষাবস্হায় ঘাড় কাত করে সে নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে তাকায়। এক প্রচ্ছন্ন অদেখা ভুবন।
বিশুদ্ধ অক্ষিপটে ভেসে উঠে খোলসমুক্ত অভিযাত্রীদের অন্তহীন যাত্রা । যে স্হান থেকে ‘আমি’র যাত্রা আরম্ভ হয়েছিল সেই স্হানে ফেরার জন্য নতুন করে যাত্রারম্ভ। নয়নগোচরে আসে অসীম সীমান্তে গন্তব্যস্থল। মাঝে আছে আগন্তুকদের জন্য আশ্রম। অতিথিশালা। শ্রীঘর। সুউচ্চ প্রাচীর। তাই মিলছেনা ঠিকানা। উদ্দিষ্ট স্থানের ঠিক আগে সুগভীর পরিখা। নেই কোন মেট্রো রেল, উড়াল সেতু, জলযান কিংবা খেয়া পারাপার। পদব্রজে পার হবার এক বিরাট সাঁকো। মনে হচ্ছে, পুরাণে বর্ণিত রঙধনুর শীর্ণ সেতু। হেঁটে হেঁটে মর্ত্যলোক থেকে আকাশলোকে গমনের সংযোগ পথ। ভারসাম্য রাখতে না পারার ভয়। অতল গভীরে নিমজ্জনের হাতছানি। সবকিছুই অতিপ্রাকৃত। অন্তহীন অপেক্ষা। পুলের ওপারে সুখের স্থায়ী নীড়। অমরধাম। ওখানে নীল আকাশ দেখা যায় না।
ফরিদ আহমদ। ৯ জুলাই, ২০২০।