ছোট্ট গল্প ১—বেহুদা কথার বেসাতি
এক দুষ্ট শিষ্য এসে গুরুকে বললেন, ‘আপনার স্ত্রীতো বিধবা হয়ে গেছেন।’ সমব্যথিত গুরু তাঁর স্ত্রীর দঃখে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছিলেন। এমন সময়ে অন্য এক শিষ্য এল। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে বুঝতে পারলেন, গুরু কেন কাঁদছেন। শিষ্যটি সাহস করে গুরুর কাছে গিয়ে বললেন, ‘আপনার স্ত্রী যদি বিধবা হয়েই থাকেন, তাহলে গুরু আপনি কিভাবে বেঁচে আছেন?’ গুরু কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন ‘ও তো আমাকে এ রকমই বলল। কেনইবা ও আমার সাথে মিছামিছি মিথ্যা কথা বলবে? ও তো জানে, মিথ্যা বলা মহাপাপ।’
ফরিদ আহমদ। ১ জুন,২০২০।
ছবি— কোর্ট পেইন্টার গোবর্ধন (১৬৩০)
ছোট্ট গল্প ২—সহজসরল
বয়স্ক এক ফকির প্রতি শুক্রবার জু’মার নামাজ শেষে আমাদের বাসায় আসতেন। সাহায্যের চেয়ে তিনি আমার বন্ধুসুলভ বাবার সাথে গল্প করে ভীষণ মজা পেতেন।
এক শুক্রবারে তিনি বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন ‘ভাই সাহেব, কেমন আছেন?’ বাবা উত্তরে বললেন, ‘কদিন ধরে চোখ ব্যথা করছে। মাথাটাও ধরে আছে।’ ফকির বললেন, ‘আমার কাছে একটা ওষুধ আছে। দু-ফোঁটা চোখে দিয়ে দেই। দেখবেন, খুব আরাম হবে।’ এই বলে তিনি বাবার চোখে ওষুধটা ঢেলে দিলেন।
কিছুক্ষণ পর বাবা ঘরে ফিরে এলেন। টকটকে লাল চোখ দুটোর মণি দেখা যাচ্ছিলো না। চোখ দিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছিল । বলছিলেন ‘বাবা, আমিতো কিছুই দেখছিনা। জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
সবকিছু সবিস্তারে শুনে বললাম, ‘প্রতিদিন আমার ডাক্তার বন্ধুদের কেউ না কেউ তোমার সাথে গল্প করতে আসে। তাদের কাউকে তো চোখের সমস্যার কথা বলতে পারতে।’
‘যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। তুই এত কিছু বুঝবি না। এখন যা করতে হবে বাবা তাড়াতাড়ি কর। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’
পরের শুক্রবার যথারীতি আব্বা সেই ফকিরের আসার অপেক্ষায় আছেন। তিনি তার সাথে গল্প করবেন। তারপর দুপুর বেলা এক সাথে খাবেন। আমি রাগ করে বললাম, ‘তুমি বসে থাকো বাবা, তোমার মেহমানের জন্য। আমি খেতে চললাম। মা ডাকছেন।’
ফরিদ আহমদ। ৭ জুন, ২০২০।