Skip to content

নিচের দিকেও তাকাতে হবে

    ফার্সি সাহিত্যে একটি প্রবাদ আছে। ‘সাতজন কবির সাহিত্যকর্ম রেখে যদি বাকি সাহিত্য দুনিয়া থেকে মুছে ফেলা হয়, তবু ফার্সি সাহিত্য টিকে থাকবে। এই সাতজন কবির অন্যতম হচ্ছেন শেখ সাদি।’শেখ সাদি রচিত একাধিক কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘গুলিস্তাঁ ও বুস্তাঁ’নামক গ্রন্থ দুটি অন্যতম।
    শেখ সাদি দৈহিকভাবে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ছিলেন। পায়ে হেঁটেও বিশ্বের বহু অঞ্চল তিনি ভ্রমণ করেছেন। গুলিস্তাঁয় তিনি লিখেছেন, আমি কখনো কালের কঠোরতা ও আকাশের নির্মমতার ব্যাপারে অভিযোগ করিনি। তবে একবার নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। কারণ পায়ে তখন জুতা তো ছিলই না এমনকি জুতা কেনার মতো অর্থও ছিল না। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ইরাকের মসজিদ আল কুফায় গিয়ে উঠলাম। তখন দেখি একটি লোক শুয়ে আছে যার একটি পা-ই নেই। তখন খোদাকে শোকর জানিয়ে নিজের খালি পা থাকাতেই সন্তুষ্ট হলাম।
    আশ্চর্যের বিষয় যে, শেখ সাদি (রহ.) হেঁটে চৌদ্দবার হজ পালন করেছিলেন। কথিত আছে, তিনি তিনবার ভারতবর্ষে পদার্পণ করেছিলেন। পাঠানরাজ আলতামাশের সময় তিনি কিছুকাল দিল্লিতে অবস্থান করেছিলেন। একবার তিনি বিখ্যাত কবি ও গায়ক আমির খসরুকে দেখতেই ভারতে আসেন।
    নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরের প্রবেশপথের দেয়ালে সেঁটে আছে একটি বিশাল কার্পেট। যার মাঝখানে লেখা আছে মহাকবি শেখ সাদির একটি কবিতা। কবিতার মাধ্যমে বলা হচ্ছে ‘সব মানুষ এক দেহের অঙ্গসম; যেহেতু সবার প্রথম উপাদান একই। যখন একটি অঙ্গ ব্যথায় আক্রান্ত হয়, বাকি অঙ্গও তখন স্থির থাকতে পারে না। অন্যের দুর্যোগে যদি উদ্বিগ্ন না হও, তবে তোমার নাম মানুষ হতে পারে না।’
    ২০০৯ সালের মার্চ মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের নববর্ষ ‘নওরোজ’ উপলক্ষে সে দেশের জনগণকে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান। ভিডিও বার্তাটিতে মিস্টার প্রেসিডেন্ট কোট করেন জাতিসংঘের প্রবেশপথের দেয়ালের কার্পেটে খচিত শেখ সাদির সেই কাব্যাংশ। তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক যে, আমরা নিজেদের মধ্যে কতগুলো বিভাজনের কারণে বিভক্ত হয়ে আছি। তবে আমরা সেই শব্দগুলো মনে রাখতে পারি, যা কবি সাদি লিখে রেখেছেন বহু বছর আগে। আদম সন্তান সবাই এক দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মতো, যেহেতু সবাই একই উপাদান থেকে তৈরি।’
    সেই মহান কবির একটা কাব্যাংশ উদ্ধৃত করছি। “মকুন্ না’লা আজ্ বেনাওয়াই বছে, চু বিনি জে খোদ্ বেনাওয়া তর্ কাছে।” পারস্যের মহাকবি আবু মুহাম্মদ মোশাররফ উদ্দিন বিন মোসলেহ উদ্দিন আবদুল্লাহ সাদি সিরাজি এ চরণ দুটির মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন যে, ‘তুমি সম্বলহীনতার জন্য বেশি কেঁদ না। কেননা, তোমার চেয়ে অধিক সম্বলহীনকে তুমি যখন দেখবে, তখন সান্ত্বনা পাবে।’
    তাই নিজের অবস্থান পরিমাপ কালে কেবল উপরের (অধিক ধন-মান এর) দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকেও তাকাতে হবে। তাহলে অতি অল্পতেই জীবনে আত্মতৃপ্তি চলে আসবে। এর মধ্যে যে আত্মতৃপ্তি, তা সত্যিই অতুলনীয়।

    ফরিদ আহমদ।